পর্বতের একটি গুহায় জিউস-এর সাথে মাইয়া'র মিলনের ফলে হের্মেজের জন্ম হয়।

 হের্মেজ

খ্রিষ্টীপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর মূল মূরতির আদলে সৃষ্ট রোমান মূর্তি।



 Hermes
গ্রিক পৌরাণিক দেবতা। ইনি অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁকে দেবদূত হিসাবে কাজ করেছেন। এর রোমান নাম মার্কার (Mercury)। আর্কেডিয়ার সিল্লেনে (Cyllene) পর্বতের একটি গুহায় জিউস-এর সাথে মাইয়া'র মিলনের ফলে হের্মেজের জন্ম হয়।

জন্ম জন্মের পর, মাইয় তাঁকে সযত্নে একটি কম্বলে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু খুব অল্প সময়ের ভিতরে ইনি বড় হয়ে উঠেন এবং হামাগুড়ি দিয়ে থেসালিতে চলে যান। এরপর এক রাত্রির ভিতরে ইনি আরও বড় হয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ানো শুরু করেন। ইনি প্রথমে আসেন পিয়েরিয়াতে। এই স্থানে এ্যাপোলোর একটি চমৎকার গরুর পাল ছিল। ইনি এই গরুরগুলোকে চুরি করার উদ্যোগ নেন। গরুর পদচিহ্ন অনুসরণ করে এ্যাপোলো তাঁর সন্ধান পেয়ে যেতে পারেন, এই জন্য তিনি ওক গাছের খসে পড়া বাকল দিয়ে অনেকগুলো জুতো তৈরি করেন এবং গরুর পায়ের সাথে বেঁধে দেন। তারপর রাতের অন্ধকারে গরুগুলোকে তাড়িয়ে নিয়ে চলে যান। অচিরেই এ্যাপোলো এই চুরির বিষয় জানতে পেরে চোর ধরার উদ্যোগ নিলেন। কিন্তু গরু নিয়ে যাওয়ার যথার্থ চিহ্ন না থাকায় ইনি বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে গেলেন। ফলে ইনি দূরদূরান্ত পর্যন্ত ইতস্ততভাবে খুঁজেও গরুগুলোর কোন হদিস পেলেন না। অবশেষে ইনি গরুচোর ধরার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করলেন। কিন্তু তারপরেও দীর্ঘসময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও চোরের সন্ধান পাওয়া গেলো না।

বেশ কিছুদিন পর আর্কেডিয়ার এক ভোজ উৎসব অনুষ্ঠানে হঠাৎ করে একটি অদ্ভুদ বাঁশির শব্দ শুনতে পেলেন উৎসবে যোগদানকারীরা। অনুষ্ঠানে যোগদানকারীরা অত্যন্ত আকৃষ্ট হলেন এই বাঁশির শব্দে। উৎসবের সেবাদানকারী পরী সিল্লেনে জানালো যে- শব্দটি আসছে সিল্লেনে পর্বতের একটি গুহামুখ থেকে। সেবিকা আরও জানালেন যে, উক্তগুহায় একটি আশ্চর্য শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। এই শিশু কাছিমের খোল ও গরুর রগ দিয়ে একটি বীণা তৈরি করে এই সুর বাজাচ্ছে। তখন সবাই সিল্লেনেকে জিজ্ঞাসা করলো এই শিশু গরুর রগ সে পেলো কোথা থেকে ? এই জাতীয় আলোচনা যখন বেশ তুঙ্গে, তখন ঘটমাক্রমে এ্যাপোলো সেখানে এসে হাজির হন। এরপর এ্যাপোলো উক্ত গুহায় প্রবেশ করে হার্মিজকে গরু চোর হিসাবে শনাক্ত করেন। এই সময় তাঁর মা মাইয়া ছেলের পক্ষ নিলেও, এ্যাপোলো কিছু সে সব কথায় কর্ণপাত না করে হার্মেজকে নিয়ে জিউসের কাছে হাজির হলেন। জিউস তাঁর এই শিশুপুত্রকে ক্ষমা করে দেবার জন্য এাপোলোকে বললেন। কিন্তু এ্যাপোলো তাঁকে স্বীকারুত্তির জন্য পীড়াপীড়ি করতে লাগলেন। শেষ পর্যন্ত  হের্মেজে সকল দায় মেনে নিলে, এ্যাপোলো  হের্মেজকে নিয়ে সিল্লেনে পাহাড়ের গুহায় মাইয়ার কাছে এলেন। এখানে তিনি তাঁর মাকে অভিবাদন করে, লুকানো স্থান থেকে তাঁর তৈরিকৃত বীণা এনে এ্যাপোলো দেখালেন। এই বাঁশি দেখে এবং বাজিয়ে এ্যাপোলো এতো খুশি হলেন যে, ইনি তাঁর বাকি গুরুগুলো দেখা শোনার জন্য  হের্মেজকে অনুমতি দিলেন। বিনিময়ে তাঁর বাঁশিটি এ্যাপোলো নিয়ে নিলেন। এরপর  হের্মেজ নল খাগড়া থেকে আরও একটি বাঁশি তৈরি করলেন। এই বাঁশির সুর শুনে এ্যাপোলো এতটাই মুগ্ধ হলেন যে, এই বাঁশির পরিবের্তে ইনি  হের্মেজকে পুরো গরু পালই দিয়ে দিলেন এবং গবাদি পশুর রাখালদের দেবতা করে দিলেন। কিন্তু  হের্মেজ উত্তরে বললেন যে তাঁর তৈরিকৃত বাঁশি অনেক বেশি মূল্যবান। এই বাঁশিটির পরিবর্তে এ্যাপোলোর কাছে ভবিষ্যত্বাণী বলার ক্ষমতা প্রার্থনা করলেন। এ্যাপোলো উত্তরে বললেন, এই তিনি ক্ষমতা দান করতে পারবেন না। তবে এ্যাপোলো জানালেন, পারনাসাসে বসবাসরত থ্রেইয়া তাঁকে এই বিষয়ে শিক্ষা দিতে পারবেন। বিষয়টি জিউস জেনে  হের্মেজকে বললেন, তুমি অত্যন্ত প্রতিভান ও উদ্ভাবনী ক্ষমতার অধিকারী, সুবক্তা, প্ররোচক। তারপর ইনি  হের্মেজকে সৎ আচরণ ও মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকার জন্য বললেন।

হার্মেস জিউস-এর কাছে বাক্যে ও কর্মে সৎ থাকার অঙ্গীকার করলেন এবং তিনি সত্য কথা বলবেন তবে জিউসের কাছে সকল সত্য কথা প্রকাশ করার অঙ্গীকার করতে পারবেন না।  হের্মেজের এই কথা জিউস পছন্দ করলেন না। তারপরেও তিনি কিছু বাড়তি দায়িত্ব  হের্মেজের উপর চাপিয়ে দিলেন। এই দায়িত্বগুলো হলো, বাণিজ্য ও ভ্রমণ সংক্রান্ত বিষয়। ইনি একই সাথে অগ্রাগামী দূতসমূহের নেতৃত্ব লাভ করেন। এক্ষেত্রে সহায়ক উপকরণ হিসাবে পেলেন, বৃষ্টি নিরোধক টুপি, পাখাযুক্ত উড়ন্ত জুতা। এরপর ইনি অলিম্পাসের দেবতা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলেন। এরপর থ্রেইয়া তাঁকে দান করলেন ভবিষ্যৎ বলার ক্ষমতা। যম দেবতা হেডস তাঁকে তাঁর দূত হিসাবে নিয়োগ দিলেন।

এরপর ইনি তিনজন ভাগ্য দেবী (ফেটস) এর সাথে বর্ণমালার সৃষ্টি করলেন। এরপর ইনি নির্ধারণ করেন জ্যোর্তিবিদ্যা বিষয়ক রীতিনীত, সঙ্গীতের স্কেল, মুষ্টিযুদ্ধ ও ব্যায়ামের রীতিনীতি, ওজন ও দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-উচ্চতা পরিমাপের বিবিধ দিক। সেই সাথে জলপাই গাছের চাষের পদ্ধতি।

অনেকের মতে  হের্মেজ প্রথমে তিন তারের বীণা তৈরি করেছিলেন, এ্যাপোলো তাঁতে আরও চারটি তারযুক্ত করে সাত তারে পরিণত করেন। অন্য মতে- হের্মেজ গোড়াতেই সাত তারের বীণা উদ্ভাবন করেছিলেন, এবং এ্যাপোলো তা প্রচলন করেন।

হের্মেজ ভেড়ার ছদ্মবেশে ওডিসিয়াসের স্ত্রী পেনেলোপে মিলিত হলে প্যান -এর জন্ম হয়।

ইনি বিভিন্ন সময়, দেবতা ও মানুষদের বিভিন্ন সাহায্য করতেন এবং বিভিন্ন সহায়ক ভূমিকা রাখতেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিচে দেওয়া হলো।

১. ইনি বীণা ও উন্নতমানের বাঁশির আবিষ্কারক করেন। প্রোমেথেয়ুস  এবং ইনি পৃথক পৃথক ভাবে আগুন আবিষ্কার করেছিলেন। এছাড়া তিনি বক্সিং, দৌড় প্রতিযোগিতা সহ বিভিন্ন ধরনের খেলার প্রচলন করেন।

২. পার্সেয়ুস যখন মেডুসার মাথা আনার উদ্যোগ নেন, তখন ইনি তাঁকে সাহায্য করেন। ইনি পার্সেয়ুসকে একটি বর্মভেদকারী বাঁকা তলোয়ার, উড়ে চলার উপযোগী একজোড়া জুতা, অদৃশ্য হয়ে থাকা যায় এমন একটি কালো মুকুট ও মেডুসার মাথা কেটে আনার জন্য একটি থলে দান করেছিলেন।

৩. জিউসের আদেশে তিনি আর্গস নামক শতচক্ষু দানবকে হত্যা করে, আইওকে মুক্ত করেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Ministry of Foreign Affairs All country

অস্ট্রেলিয়ার প্রকৃতির বিরুদ্ধে নির্মিত পৃথিবীর দীর্ঘতম সীমান্ত বেড়া

Switzerland Schengen Visa